নিজস্ব প্রতিবেদক:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মহেশখালী সফর এবং একই দিনে মহেশখালী-মাতারবাড়ি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র উদ্বেগ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম নামের এক ভেরিফায়েড ফেসবুক ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে একটি পোস্টের মাধ্যমে এই দুটি ঘটনাকে পাশাপাশি রেখে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পোস্টটি প্রকাশের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
তার পোস্টে আমিনুল ইসলাম লিখেছেন, "আজকে দেখলাম পিটার হাস মহেশখালীতে গেছে। আর আজই অধ্যাপক ইউনূস এই কথা এই কথা বলেছেন! বাংলাদেশ কি থাকবে নাকি আস্ত দেশটাই দিয়ে দিবেন? ইউনূস দেশ বিক্রি করতে আসছে।"
তিনি তার পোস্টে আরও যোগ করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশে প্রবেশ করেছে, সেসব দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি সিরিয়া, আফগানিস্তান, সুদান ও ইরাকের কথা উল্লেখ করেন এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশেও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তার এই পোস্টের সাথে তিনি দৈনিক সমকালের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট যুক্ত করেন। ওই প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে শিরোনাম করা হয়েছে, "মহেশখালী-মাতারবাড়িতে নতুন শহরের জন্ম হবে: প্রধান উপদেষ্টা"। প্রতিবেদনের ভেতরের অংশে আরও লেখা ছিল, "প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা সমুদ্র জগতে কখনো প্রবেশ করিনি। ওটা নিয়ে চিন্তাও করিনি।"
পিটার হাসের মহেশখালী সফরের দিনই মহেশখালীকে কেন্দ্র করে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার ঘোষণাকে অনেকেই ভিন্ন চোখে দেখছেন। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এই দুটি ঘটনাকে মিলিয়ে নানা ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও মন্তব্য করছেন। আমিনুল ইসলামের পোস্টটি সেই আলোচনারই প্রতিফলন, যা দেশের বর্তমান নীতি এবং বিদেশি শক্তির সম্পৃক্ততা নিয়ে জনমনে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও সন্দেহকে সামনে নিয়ে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারে চীন-সমর্থিত গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান নিতে সক্রিয় হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট, মানবিক করিডোর, এবং চট্টগ্রাম বন্দর—সব মিলে এই অঞ্চলটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে একটি “খ্রিস্টান রাজ্য” গঠনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে, যা পূর্ব তিমুরের ঘটনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও সতর্ক করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বাংলাদেশে একটি এয়ার বেজ স্থাপনের মাধ্যমেও এসেছে।
একাধিক সূত্র ও বিশ্লেষকের মতে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই ষড়যন্ত্রে “প্রক্সি নেতা” হিসেবে ব্যবহার করছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের দাবি, ইউনূসকে জাতিসংঘ মহাসচিব করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সহায়তা, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে বাধা এবং বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তারা মনে করছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা বা বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতার আড়ালে বাংলাদেশকে মার্কিনি স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন