নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণহানি ও তথ্য গোপন করার অভিযোগ ঘিরে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবারের ঘটনায় হতাহতদের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ না করায় প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের দাবি ও ক্ষোভ দমাতে নতুন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে।
ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার মাইলস্টোন কলেজ পরিদর্শন করতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ড. আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার পর বের হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের ঘেরাও করে রাখেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই দুই উপদেষ্টা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং আড়াল করতে এসেছেন প্রকৃত তথ্য।
সূত্র জানায়, পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নিতে আসিফ নজরুল ফোনে যোগাযোগ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সার্জিস আলমের সঙ্গে। তিনি তাদের দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেওয়ার নাটক করতে বলেন, যাতে সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে চাপ তৈরি করা যায়। একইসঙ্গে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয় আরও উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করতে। তবে শিক্ষার্থীরা এ ষড়যন্ত্র টের পেয়ে ঘোর আপত্তি জানায়। আশ্বাস দিলেও আসিফ নজরুলের কথায় আস্থা রাখতে না পেরে তাকে এবং সি আর আবরারকে পুনরায় অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে বিমানটি দুটি ক্লাসরুমে আছড়ে পড়ে, যেখানে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, "আমি নিজেই ২৫টি মরদেহ বের করেছি, অথচ কর্মকর্তারা বলছেন মাত্র ৩ জন মারা গেছেন। আমরা সাংবাদিকদের বলার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমাদের ধমকানো হয়।"
সূত্র বলছে, দুর্ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীর সহায়তায় মরদেহ সরিয়ে ফেলা হয়। রাতে অ্যাম্বুলেন্সের আসা-যাওয়া এবং সাংবাদিকদের দূরে রাখার কারণে জনমনে রহস্য ও সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। দাবি উঠছে, ঘটনাটি গোপন করার নির্দেশ এসেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিক থেকে।
এই পরিস্থিতিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তারা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে এবং ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছে:
নিহতদের প্রকৃত নাম ও পরিচয় প্রকাশ। আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা। শিক্ষকদের ওপর সেনাসদস্যদের আচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা। নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ। পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল করে নতুন ও আধুনিক বিমান সংযোজন। প্রশিক্ষণ পদ্ধতি মানবিক ও নিরাপদভাবে সংস্কার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “মরদেহ গোপন, সাংবাদিকদের বাধা ও তথ্য লুকানোর অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে এটি শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের ওপর বড় আঘাত। বিশেষ করে ড. ইউনূসের প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তের দাবি রাখে।”
তারা আরও বলেন, মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা যেভাবে সচেতনভাবে আন্দোলন করছে, তা গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি। সরকার ও প্রশাসনের উচিত দ্রুত তাদের দাবিগুলো আমলে নেওয়া ও একটি স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন করা। তাদের ৬ দফা দাবি যুক্তিসঙ্গত এবং সরকার ও সেনাবাহিনীর তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন