নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ব্যবসা ও শিল্প খাতে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তার ঘন ছায়া। উচ্চ সুদের ঋণ, তারল্য সংকট ও উৎপাদন ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধিতে দিশেহারা উদ্যোক্তারা। কেউ পুরোনো ঋণের কিস্তি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন, আবার কেউ নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে পারছেন না।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ইউনুস সরকারের ব্যর্থ অর্থনৈতিক নীতি ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই এ সংকট তৈরি হয়েছে।
ব্যাংক ঋণ কার্যত স্থবির, সুদ বেড়ে দ্বিগুণ
সরকার বদলের পর আর্থিক অস্থিরতার কারণে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ব্যাংক ঋণ বিতরণ কার্যত বন্ধ রেখেছে।
কয়েক বছর আগেও ৯ শতাংশ সুদে শিল্প স্থাপন করা উদ্যোক্তাদের এখন সেই ঋণের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ সুদ।
ফলে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ঝুঁকি এড়াতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে কড়াকড়ি করায় উদ্যোক্তারা পড়েছেন মারাত্মক টাকার জোগানসংকটে। উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধিও কার্যত থমকে গেছে।
“অর্থনীতি খুঁড়িয়ে চলছে” বিআইডিএসের সাবেক প্রধান
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন খুঁড়িয়ে চলছে। বেসরকারি খাতে ঋণ যাচ্ছে না, বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে। এরকম অনিশ্চয়তায় কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না।”
তিনি আরও বলেন, “সুদহার যত বাড়ছে, ততই বিনিয়োগের আগ্রহ কমছে। এতে শুধু উদ্যোক্তারা নয়, পুরো অর্থনীতিই চাপে পড়ছে।”
ঋণ প্রবৃদ্ধি ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এখন ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
আগস্ট মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে, যা গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বর্ণনা করা হয়েছে “মন্দার ছায়ায়”।
বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহ দুই-ই দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে।
একই সঙ্গে ঋণখেলাপির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশেরও বেশি যা ব্যবসা পরিবেশে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
অগ্রাধিকার খাতেও ঋণ পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা
অর্থনীতিবিদদের মতে, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির ফলে সুদের হার বেড়ে গেছে ভয়াবহভাবে। কৃষি, এসএমই, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার খাতেও এখন ঋণ পাওয়া কঠিন।
কৃষকরা পাচ্ছেন না স্বল্পসুদের অর্থায়ন, মাঝারি উদ্যোক্তারা থেমে আছেন গ্যাস-বিদ্যুৎসংকটে অচল কারখানার সামনে। হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনেও এখন ব্যাংক ঋণের সুদ ১৫ শতাংশের ওপরে।
“অর্থনীতি এখন টিকে থাকার লড়াই করছে” বিকেএমইএ
প্রস্তুত পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, “দেশের অর্থনীতি এখন টিকে থাকার লড়াই করছে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে, সুদের চাপও বেড়েছে। অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।”
তিনি মনে করেন, সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তা
অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগ বিশ্লেষকদের মতে, ইউনুস সরকারের ব্যর্থ নীতি ও উচ্চসুদের বোঝা কমানো না গেলে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। সুদের হার এক অঙ্কে নামানো গেলে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরে আসবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং উৎপাদনে নতুন গতি আসবে।
সব মিলিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল সংকট এখন টাকার জোগান। ব্যাংকগুলোয় অর্থ থাকলেও সেটি ঘুরছে না।
উচ্চ সুদ ও অনিশ্চিত পরিবেশে ঋণ নিতে ভয় পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ইউনুস সরকারের ব্যর্থ অর্থনীতি পরিচালনার কারণে শিল্প, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হয়ে উঠতে পারে।
মন্তব্য করুন