Insight Pulse
প্রকাশ : Oct 23, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

এমপি ছাড়াই ‘এমপি প্রকল্পে’ ব্যয় বাড়ছে ৩৯% অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দুর্নীতির নতুন নজির

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তার উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকারের আমলে ‘সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন ২’ বা জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত এমপি প্রকল্পে হঠাৎ ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য। তবে বর্তমানে দেশে কোনো সংসদ সদস্য নেই, বরং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পটি বন্ধের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় বন্ধ হতে যাওয়া এই প্রকল্পেই ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে এলজিইডি (LGED)।

২০২২ সালে অনুমোদিত এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,০৮২ কোটি টাকা। নতুন প্রস্তাবে আরও ৪১৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ১,৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে—যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে “অস্বাভাবিক” ও “অযৌক্তিক” বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, প্রকল্পের ৬৪ শতাংশ কাজ শেষ হলেও আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাকি অংশ শেষ করে দ্রুত প্রকল্পটি বন্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো অন্তর্বর্তী সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতি সন্দেহ জাগায়। প্রকল্পের নতুন মেয়াদ প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত, যা পূর্বের মেয়াদের চেয়ে এক বছর বেশি।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন প্রস্তাবে চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং মেহেরপুরে সর্বনিম্ন ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই বৈষম্য ও অপ্রত্যাশিত ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন নিজেই।

আইএমডির পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে, শুরুতে বরাদ্দ বেশি থাকলেও পরে বরাদ্দ সংকটে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। তবুও এখন অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে ৮০০ কোটি টাকার কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পটির চলমান কাজ শেষ করার সিদ্ধান্তই যথেষ্ট ছিল। হঠাৎ ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি দুর্নীতি ও স্বার্থসংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়।”

সরকারের এক সাবেক প্রকল্প পরিচালক নাজমুল করিম বলেছেন, স্থানীয় চাহিদার কথা বলে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, স্থানীয় চাহিদা না কি ‘উপদেষ্টাদের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা’?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমপি ছাড়াই এমপি প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের আর্থিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাবের স্পষ্ট উদাহরণ।


মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারাকান্দা থানায় মামলা বাণিজ্যের মহোৎসব, স্থানীয় আওয়ামী লীগ

1

৬০০ কোটি টাকার হাসপাতাল এখন জুলাই আহতদের ‘আবাসিক হোটেল’

2

বিভুরঞ্জনকে হুমকির পরেই মেঘনায় লাশ, অভিযোগের তীর প্রেস সেক্র

3

জাতি হারাল ভাষা, সাহিত্য ও রবীন্দ্রচর্চার এক অমর পথিক

4

বাংলাদেশের ওপর জঙ্গিবাদের তকমা, গণহারে হচ্ছে ভিসা প্রত্যাখান

5

দুই সমাবেশ স্থলেই মার খেলো এনসিপি, তাহলে গোপালগঞ্জ নিয়ে দ্বি

6

ভোট না দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন ইউনূস, নতুন অস্ত্র পিআর পদ্ধতিত

7

জামায়াত-ইউনূসের যোগসাজশে ছড়ানো হচ্ছে গুজব, লাশ গুমের মাস্টার

8

আন্তর্জাতিক যুদ্ধবাজদের নতুন থিয়েটার বাংলাদেশ, ঝুঁকিতে সার্ব

9

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে ইউনূসপন্থীদের, নি

10

মব নিয়ে বিএনপির দ্বিচারিতা, থামছে না সন্ত্রাস

11

৫ আগস্টের পর বিএনপির দখলকাণ্ডে দিশেহারা জনগণ

12

আমেরিকার হাতে দেশ দেয়ার ষড়যন্ত্রের আরেক ধাপ এগিয়ে গেল ইউন

13

মুক্তিযুদ্ধের আলোচনায় হামলা ও লতিফ সিদ্দিকী গ্রেপ্তার; গণতন্

14

মদ-যৌনতায় আচ্ছন্ন আসিফসহ এনসিপির নেতারা, ইন্টারকন্টিনেন্টালে

15

এক সময় মানবাধিকারের মুখপাত্র আসদুজ্জামান এখন মবের হোতা?

16

৫ আগস্টের পর জঙ্গিবাদের আস্ফালনে, ভয়-উৎকণ্ঠায় তটস্থ জনগণ

17

মব উস্কে দেশ ধ্বংসের নীলনকশা করেছে ইউনূস গং

18

শেষ ধাপে ইউনূসের মিশন, আলোচনায় ‘মাইনাস টু’

19

বেপোরোয়া জুলাই যোদ্ধারা, মবের নামে ফের কণ্ঠরোধ

20