নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ এবং উত্তেজনার মধ্যে সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি উঠেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী দীপ্ত সাহাও। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেনাবাহিনী বিচারবহির্ভূতভাবে গুলি চালিয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির একটি সমাবেশ শেষে নেতারা যখন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন, তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর একটি দল প্রথমে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে তারা সেখান থেকে সরে যায়। কিছু সময় পর পুনরায় ফিরে এসে জনতার ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, গুলিতে নিহত এক যুবকের মরদেহ বহন করে তার মামা বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ তাদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুলনাও করছেন। মন্তব্য এসেছে, “যখন মানবাধিকার রক্ষার নামে সন্ত্রাসীদের গুলি করা হয়নি, তখন আজ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করা হলো।”
উল্লেখ্য, এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই উত্তেজনা তৈরি হচ্ছিল। মঙ্গলবার রাত থেকেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা, পাল্টাপাল্টি পোস্ট ও হুঁশিয়ারি। বুধবার এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে একাধিক স্থানে বাধার সম্মুখীন হন। এ সময় পুলিশের গাড়ি, ইউএনওর গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনেও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগের দিন, ঢাকার টিএসসিতে এনসিপির ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। তিনি বলেন, “যারা একসময় বলত বাংলা ছেড়ে চলে যেতে, তারা এখন কোথায়?” তার ভাষণে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগও তুলেছেন অনেকে।
স্থানীয়রা দাবি করছেন, গোপালগঞ্জের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল এনসিপি এবং তাদের মদদপুষ্ট নেতারা। তবে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই চেষ্টাকে প্রতিহত করেছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবির যৌথ মোতায়েন চলছিল এবং জেলা জুড়ে ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, গোপালগঞ্জে সংঘটিত ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভয়ংকর মোড় তৈরি করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ সেনাবাহিনীর ওপর উঠা অত্যন্ত গুরুতর। এমন পদক্ষেপ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি আস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। এই ধরনের সংঘাতমূলক পরিস্থিতি যখন রাজনৈতিক রঙে রঞ্জিত হয়, তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা সংবেদনশীলভাবে ব্যাখ্যা করা জরুরি।
তারা আরও বলছেন,এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্য ও স্লোগান থেকে আরও উসকে ওঠে। সরকারবিরোধী মতপ্রকাশ ও সমাবেশকে যদি রাষ্ট্রীয় শক্তি দিয়ে দমন করা হয়, তা হলে সেটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং জনগণ—তিন পক্ষেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা দরকার। নয়তো বিভক্তি আরও গভীর হবে এবং সহিংসতা বাড়বে।”
মন্তব্য করুন