Insight Desk
প্রকাশ : Aug 4, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

ভয় দেখিয়ে ৫ আগস্ট ‘গণজোয়ার’ সৃষ্টির অপচেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ এক অদ্ভুত রাষ্ট্রীয় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সরকার, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতের মতো চরমপন্থী শক্তির অস্বাভাবিক জোট ৫ আগস্টের তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণা’কে কেন্দ্র করে ভয়, চাপ ও অর্থের জোরে ‘গণজোয়ার’ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই আয়োজন পাকিস্তানকে খুশি করতে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা পদদলিত করে পরাজিত পাকিস্তানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি কূটকৌশল মাত্র। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে এনসিপির কর্মসূচির ব্যর্থতার লজ্জা ঢাকতে সরকার বিরোধীদের সঙ্গে যৌথ মঞ্চ গড়েছে। কিন্তু এতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা বা সম্মানের লেশমাত্র নেই, আছে শুধু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, লুটপাট ও জাতীয় মর্যাদার অবমাননা।

প্রশাসনের ভয়াবহ অপব্যবহার ‘চাকরি যাবে’ ভয়

সরকারি দপ্তরগুলোতে ৫ আগস্টের তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণা’ সমাবেশে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভয়াবহ অপব্যবহার ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে। সরাসরি ও মৌখিকভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সমাবেশে না গেলে তাদের চাকরি থাকবে না। এই নির্দেশে কোনো পদস্থ কর্মকর্তা বা সাধারণ কর্মচারী—কেউই রেহাই পাচ্ছেন না।

সূত্র জানায়, সমাবেশে উপস্থিতির জন্য খাতা রাখা হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদারকি করে নিশ্চিত করবেন যেন কেউ বাদ না যায়। এই প্রক্রিয়াকে সমালোচকরা ‘প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং জনগণের স্বাধীন ইচ্ছা ও অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর একটি সুসংগঠিত প্রচেষ্টা। সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে সমাবেশে জোর করে আনা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনের একজন নেতা বলেন, এ ধরনের হুমকি ও জোরপূর্বক উপস্থিতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার। এটি জনগণের মধ্যে ভয় ও অসন্তোষ ছড়াবে এবং সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। না গেলে চাকরি হারানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। এটি আমাদের স্বাধীনতা ও পেশাগত মর্যাদার ওপর আঘাত। আমরা বাধ্য হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু এই সমাবেশে আমাদের কোনো স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নেই।

এই সমাবেশে জোরপূর্বক অংশগ্রহণের নির্দেশনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সরকারি কর্মচারী বলেন, আমরা চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে সমাবেশে যাচ্ছি, কিন্তু এটি আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এমন নির্দেশ দেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার অপমান।

বিশেষ সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের ‘জুলাই ঘোষণা’ সমাবেশে লোক জড়ো করতে বিএনপিকে ২০ কোটি এবং জামায়াতে ইসলামীকে ২০০ কোটি টাকার গোপন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে বিশেষ সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে ২০ কোটি টাকা হেফাজত নেতাদের পকেটে গেছে। প্রতিজন অংশগ্রহণকারীকে ২০০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে গাড়িভাড়া ও খাবারের জন্য। কিন্তু চাকরি হারানোর হুমকির মুখে ঢাকায় আসতে বাধ্য সরকারি কর্মীদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। নিজের পকেটের টাকায় সমাবেশে হাজির হওয়াই তাদের নিয়তি। এটি জনগণের অর্থের অপব্যবহার এবং গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি অবমাননা।

মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রপাগান্ডা সত্যকে ঢাকতে ভিউ বাণিজ্য

৫ আগস্টের তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণা’ সমাবেশকে ‘গণজোয়ার’ হিসেবে প্রচার করতে প্রশাসন মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভিউ বাণিজ্যের মাধ্যমে কৃত্রিম জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নির্দিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে লাইভ সম্প্রচারে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া, অন্তত ১০০ জন ইউটিউবারকে ১০-২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে লাইভ সম্প্রচার করে ভিউ বাড়াতে এবং ‘জনতার ঢল’ দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংবাদকর্মী বলেন, “আমাদের চ্যানেলকে সরকারি চাপে লাইভ সম্প্রচার করতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি সাংবাদিকতার নীতি ও স্বাধীনতার পরিপন্থী। আমরা জনগণের সত্য জানার অধিকারকে অগ্রাহ্য করে মিথ্যা জনমত তৈরির অংশ হতে বাধ্য হচ্ছি।”

সমালোচকরা বলছেন, এই কৃত্রিম প্রচারণার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সত্যকে ঢাকতে এবং জনগণের চোখে ধুলো দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মিডিয়ার স্বচ্ছতার পরিপন্থী।

চাঁদাবাজির ভয়াল চিত্র রিকশাওয়ালাও রেহাই পায়নি

৫ আগস্টের তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণা’ সমাবেশ সরকারি আয়োজন হলেও চাঁদাবাজির ভয়াল চিত্রে রূপ নিয়েছে, যা এনসিপি, এবি পার্টি ও জামায়াতের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে, এমনকি ফুটপাতের হকার, দোকানদার ও রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করা হয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশাওয়ালা বলেন, আমার দিনের উপার্জন থেকে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। না দিলে রাস্তায় চলতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। এটা আমাদের মতো গরিব মানুষের ওপর জুলুম।

জেলাভিত্তিক ‘লোক পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা’ নির্ধারণ করে প্রতিটি এলাকায় কোটা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, “আমাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। না পারলে নানা ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হবে। এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, বরং জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই সমাবেশ কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, বরং চাঁদাবাজি ও হুমকির মাধ্যমে সাজানো একটি প্রহসন। এটি জনগণের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সরাসরি আঘাত।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনের একজন নেতা বলেন, চাঁদাবাজি, মিডিয়া ম্যানিপুলেশন ও সরকারি কর্মচারীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে এই সমাবেশ জনগণের অংশগ্রহণের নামে একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রকাশ। এটি দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করছে।

মিডিয়ার চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য টেলিভিশন চ্যানেল ও ইউটিউবারদের টাকার প্রলোভন দেখানো হয়েছে, যারা ভাড়াটে লোকের ভিড়কে ‘জনতার ঢল’ হিসেবে প্রচার করছে। সরকারি কর্মচারীদের ‘চাকরি যাবে’ ভয় দেখিয়ে সমাবেশে জোর করে আনা হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, সরকার, প্রশাসন, চরমপন্থী দল ও ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির এই যৌথ প্রচেষ্টা জনগণের স্বাধীন ইচ্ছাকে জিম্মি করে গণতন্ত্র নয়, শাসনতন্ত্রের দুঃস্বপ্ন মঞ্চস্থ করছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টাকা পাচারের প্রমাণ চেয়ে ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনার

1

এবার দুর্নীতি করে ধরা খেল জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড মাহফ

2

কোটায় অস্ত্রের লাইসেন্স আসিফ মাহমুদের?

3

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে শিবিরের সাইবার বুলিংয়ের শিকার নারী

4

মবকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ত্রাস ছড়াচ্ছেন ইউনূস

5

ষড়যন্ত্রের নীল নকশা ফাঁস: গুজব-মব দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সরাতে চা

6

চাঁদাবাজির টাকায় চলছে এনসিপির রাজনৈতিক খেলা

7

দেশ ধ্বংস করতে জামায়াত-শিবিরের ছাত্র-জনতার ব্যানার

8

শেখ হাসিনাকে নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন করে মিডিয়া ট্রায়াল

9

মিডিয়াকে হুমকি গণতন্ত্রের পরিপন্থি

10

চোট থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশের পেস ত্রয়ী

11

জঙ্গি নিয়ে ইউনূসের পুলিশবাহিনীর মিথ্যাচার ফাঁস করল মালয়েশিয়া

12

দুই সমাবেশ স্থলেই মার খেলো এনসিপি, তাহলে গোপালগঞ্জ নিয়ে দ্বি

13

শিক্ষার্থীদের দমাতে হাসনাত-সার্জিসকে দিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে আসি

14

সরকারের ছত্রছায়ায় জামায়াত-এনসিপি, নির্বাচন নিয়ে ঘুমপাড়ানি গল

15

ইউনূসের ছত্রছায়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী কিশোরগ্যাংয়ের দেশ

16

ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশজুড়ে মবের ছড়াছড়ি

17

আন্তর্জাতিক যুদ্ধবাজদের নতুন থিয়েটার বাংলাদেশ, ঝুঁকিতে সার্ব

18

থানায় প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলা: রাজশাহীতে এইচএসসির একটি প্রশ

19

ভিত্তিহীন অভিযোগে হয়রানি: ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে টিউলিপের

20