নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার অভিজাত ওয়েস্টিন হোটেলের ৮০৮ নম্বর কক্ষে রহস্যজনকভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছেন মার্কিন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা টেরেন্স আরভেল জ্যাকসন। বয়স প্রায় ৫০ বছর। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও দীর্ঘদিন মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেসে দায়িত্ব পালন করা এ কর্মকর্তা বর্তমানে কর্মরত ছিলেন ১ম স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ড (এয়ারবর্ন)-এর কমান্ড ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসেবে।
হোটেল সূত্রে জানা যায়, ২৯ আগস্ট “ব্যবসায়ী” পরিচয়ে জ্যাকসন ওয়েস্টিন হোটেলে ওঠেন, যেখানে তিনি মার্কিন দূতাবাসের রেফারেন্স ব্যবহার করেন। ৩১ আগস্ট সকালে হোটেলের কর্মীরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন এবং কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ দেখা যায়নি।
ঘটনার পরপরই মার্কিন দূতাবাস দ্রুত হস্তক্ষেপ করে লাশ নিজেদের হেফাজতে নেয় এবং কোনো ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা এড়িয়ে মরদেহ সরিয়ে নেয়। এই অস্বাভাবিক তৎপরতা বিষয়টিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, টেরেন্স আরভেল জ্যাকসন ছিলেন ইউএস আর্মি গ্রিন বেরেটস অফিসার (MOS 18A)। তাঁর বিশেষ দক্ষতার মধ্যে ছিল— অনকনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার (গেরিলা যুদ্ধ, সাইকোলজিক্যাল অপারেশন) । বিদেশি সেনাদের প্রশিক্ষণ ও গোপন মিশন পরিচালনা ও সিআইএ’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করা।
সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ঢাকায় মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস কর্মকর্তাদের ঘন ঘন উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্যাকসনের অবস্থানও হয়তো একটি কভার অপারেশনের অংশ ছিল। সম্ভাব্য মিশন হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মার্কিন কার্যক্রম নিয়ে পূর্ব থেকেই নানা গোপন আলোচনা ছিল। অনেকেই ধারণা করছেন, জ্যাকসন সরাসরি বাংলাদেশি জঙ্গি ও রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।
হোটেল সূত্র বলছে, ঘটনাস্থলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ অন্যান্য তদন্তকারী ইউনিটের কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মতামতকে গ্রাহ্য না করে কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না দিয়ে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি মরদেহটি নিয়ে যায়। এর আগেও মার্কিন গোয়েন্দাদের ইরান (১৯৫৩) ও কিউবা (১৯৬১) থেকে মৃত এজেন্টদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার উদাহরণ রয়েছে।
ঘটনার পর বাংলাদেশে মার্কিন গোপন সামরিক উপস্থিতির প্রশ্ন আবারও জোরালো হলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হলো—বাংলাদেশের ভেতরে বিদেশি শক্তির প্রভাব আরও বেড়েছে, যার মাধ্যমে স্থানীয় জঙ্গি ও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নতুন নিরাপত্তা সংকট তৈরি হতে পারে।
ঢাকার অভিজাত হোটেলে মার্কিন সেনা কর্মকর্তার এভাবে রহস্যমৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়। বরং এটি বাংলাদেশের ভেতরে সক্রিয় বিদেশি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, গোপন সামরিক কার্যক্রম ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের আভাস বহন করছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ সরিয়ে নেওয়া এবং ওয়াশিংটনের নীরবতা প্রমাণ করছে বাংলাদেশ আজ কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক গুপ্তচরবৃত্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
মন্তব্য করুন