নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা থাকলেও, তার কর্মকাণ্ডের কারণে সংকটে পড়েছেন দেশের প্রবাসী শ্রমিকরা। বিশেষ করে তার আসন্ন মালয়েশিয়া সফর ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অতীতের মতো এবারও সফরের পর সে দেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি জানান, মূলত জুলাই মাসে মালয়েশিয়া সফরের পরিকল্পনা থাকলেও অভ্যন্তরীণ কর্মসূচির কারণে তা পিছিয়ে আগস্টে নেয়া হয়েছে।
তবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক এই সফরের পটভূমিকে ঘিরে আরও প্রশ্ন তৈরি করেছে।
শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব ও ইউনূসের প্রতিষ্ঠান
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে ইউনূস ঘনিষ্ঠ লামিয়া মোর্শেদের নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এই গোষ্ঠী গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (GESL)-এর মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএমইটি থেকে ২০০৯ সালে বাতিল হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুনরায় অনুমোদন পায়। এর পেছনে লবিং ও রাজনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএমইটির এক কর্মকর্তা জানান, সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে গত এক বছরে জনশক্তি রপ্তানিতে প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক উদ্বেগ
চীন ঘনিষ্ঠতায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্য হারাচ্ছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্চে চীন সফর করেন ড. ইউনূস এবং সেখানে কিছু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও ফাটল ধরেছে। ভারতের দেওয়া ট্রান্স-শিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, ভিসা জটিলতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত আশ্রয় ইস্যু—সব মিলিয়ে আঞ্চলিক সম্পর্কেও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন বাড়ছে। বাংলাদেশ গত মাসে ৩৭% পারস্পরিক শুল্ক এড়াতে আলোচনার চেষ্টা করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পায়নি বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো ও নিরাপত্তা শঙ্কা
গত মাসের শেষে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। এরপর থেকে সেখানকার প্রবাসীরাও বিপাকে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও অভিবাসন নীতির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় মালয়েশিয়া ১২৩ বাংলাদেশিসহ মোট ১৯৮ জন বিদেশি নাগরিককে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১২৩ বাংলাদেশিসহ মোট ১৯৮ জনকে ‘নট টু ল্যান্ড’ নীতির আওতায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোহাম্মদ শুহাইলি মোহাম্মদ জেইন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একচেটিয়া প্রভাব, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ভারসাম্যের অভাবের কারণে দেশের শ্রমবাজার, অর্থনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এসব সংকটের সমাধান না হলে প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন