নিজস্ব প্রতিবেদক
ফ্রান্সে অবস্থানরত চিকিৎসক ও অনলাইন কর্মী ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে গুজব, প্রোপাগান্ডা ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রকাশিত একাধিক পোস্ট ও ভিডিও দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সূত্র জানায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন এবং সামাজিক ইস্যু নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার কিছু পোস্টে এমন সব দাবি করা হয়, যা সরকারি বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে নিশ্চিত হয়নি।
১২ অক্টোবর রাতে ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যের যাচাইকৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন যে সেনাবাহিনীর ৪৬ ব্রিগেডের “অস্বাভাবিক মুভমেন্ট” দেখা যাচ্ছে এবং সম্ভাব্য ‘ক্যু প্রচেষ্টা’ রুখে দিতে জনগণকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান। একই রাতে তিনি আরও একটি পোস্টে ছাত্র ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের “রাতেই রাজপথে নামতে” অনুরোধ করেন। এসব পোস্টে ব্যবহার করা ভাষা ও আহ্বানকে অনেকেই উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তবে সেনাবাহিনী সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, এ ধরনের কোনো অস্বাভাবিক মুভমেন্ট বা সামরিক কার্যক্রম ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন গুজব বলে মন্তব্য করেছে।
ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যের নাম অতীতেও বিতর্কের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০০৮ সালে তার মালিকানাধীন ‘পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস’ কোম্পানির সরবরাহ করা কালাজ্বরের ওষুধে কার্যকর উপাদান না থাকার অভিযোগে বহু রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, ওষুধটিতে কার্যকর উপাদান ছিল না। তদন্তে কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ মিললেও পরবর্তীতে ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য ফ্রান্সে চলে যান এবং সেখান থেকেই অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয়তা বজায় রাখছেন।
এছাড়াও নারীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করার জন্য তিনি ‘৩ ইঞ্চি’ নামে বেশি পরিচিত।”
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন, বিশেষ করে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও পরবর্তীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তার বেশ কিছু পোস্ট ও বক্তব্য দেশে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মিথ্যা বা উসকানিমূলক তথ্য ছড়ানো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এবং এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসন ও সাইবার ইউনিট বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ।
বিশেষজ্ঞরা সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, অনলাইনে অপ্রমাণিত বা ভিত্তিহীন তথ্য বিশ্বাস বা শেয়ার না করতে এবং শুধুমাত্র যাচাইকৃত উৎসের খবরের ওপর নির্ভর করতে।
মন্তব্য করুন