নিজস্ব প্রতিবেদক
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে দেশের ইতিহাসে যিনি সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন, সেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে গিয়ে এবার নিজেই বিপাকে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।
চলতি বছরের শুরুতে সামান্তা অভিযোগ করেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি অপকৌশলের মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে বাধা দিয়েছেন। অথচ সম্প্রতি রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে এক সেমিনারে তিনি নিজেই বলেছেন, বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক কমিটিতে নারীদের ‘সিস্টেমেটিক্যালি সাইড’ করে দেওয়া হচ্ছে এবং সাইবার বুলিংয়ের মাধ্যমে নারীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, “জুলাই আন্দোলনে প্রত্যেক জেলায় নারীরা সামনে থাকলেও এখন তাদের পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে, মেয়েরা রাজনীতিতে অনিরাপদ। পরিবারগুলোও বাধা দিচ্ছে।” এই মন্তব্যেই স্পষ্ট, সামান্তার আগের বক্তব্য ছিল অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ভূমিকা
বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তার সরকার ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ প্রণয়নসহ বিভিন্ন সাহসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা নারীর ক্ষমতায়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।
নারীকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে অধিষ্ঠিত করার মাধ্যমে শেখ হাসিনা নারীর আত্মবিশ্বাসের নতুন যুগের সূচনা করেন। তার নেতৃত্বেই দেশে প্রথম নারী স্পিকার, নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ উপনেতা মনোনীত হন। উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। বর্তমানে নারীরা প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং কূটনীতিকসহ সব স্তরে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য তিনি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রায় সব পাবলিক পরীক্ষায় মেয়েরা ছেলেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নারীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, ৬০% নারী শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা, বাল্যবিবাহ রোধ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন প্রণয়নসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিসরেও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, এবং ইউনেসকোসহ বিভিন্ন সংস্থা তাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’, ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
ডিজিটাল অর্থনীতিতেও নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার নারী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। এমনকি কোভিড মহামারিতেও নারী শ্রমিকরা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ৬৯% অবদান রেখেছেন।
নারীর ক্ষমতায়ন শুধু সামাজিক পরিবর্তন নয়, এটি এখন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামান্তা শারমিনের বক্তব্যে চরম দ্বিচারিতা পরিলক্ষিত হয়। একদিকে তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নারী নেতৃত্বে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন, অপরদিকে নিজেই স্বীকার করেন যে, বর্তমানে নারীদের সিস্টেমেটিকভাবে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার ভূমিকা ঐতিহাসিক। কোনো রাজনৈতিক নেত্রীই এর ধারেকাছেও নেই।
মন্তব্য করুন