Insight Desk
প্রকাশ : Jun 25, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম — এই কথাটাই আজ নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে যারা

যাদের হাতে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তাদেরকেই আজকে তালিকা থেকে মুছে ফেলার প্রস্তুতি চলছে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখলকারী অস্বীকৃত ও অনির্বাচিত সরকারের এক উপদেষ্টা—ফারুক ই আজম—বলেছেন, “মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা কেউ যদি আর পরিচয় দিতে না চান, তাহলে তাদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে চাই ইনডেমনিটি দিয়ে।”

এ এক নতুন কৌশল। সরাসরি না বলে, ধীরে ধীরে—নামে, নীতিতে, ইনডেমনিটির পর্দা টেনে—মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ডিলিট করে দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছে এই গোষ্ঠী। ইউনুসের কথিত অন্তর্বর্তী সরকার আজ স্বাধীনতার স্বাক্ষরকারীদের মুখে তালা ঝুলাতে চায়। যেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়াটা কোনো লজ্জার ব্যাপার! যেন একাত্তরে অস্ত্র তুলে নেওয়া ভুল ছিল, এখন “দয়া করে” যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তারা নিজ দায়িত্বে সরে যান—সরকার শুধু একটা “ক্লিয়ার এক্সিট” দিয়ে দেবে!

এই প্রস্তাব শুধু লজ্জাজনক না, এটা একটি চরম অবমাননা। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে তার পরিচয় ছাড়তে বলার অধিকার কে দিল এই অ-সরকারকে? কাদের হয়ে কাজ করছে এই ফারুক ই আজম? আর এই কথিত যাচাই-বাছাইয়ের নামে কী হচ্ছে আসলে?

যা হচ্ছে, তা খুব পরিষ্কার: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে আসল মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে, তালিকায় অন্য নাম ঢোকানো হবে। নতুন ‘বিজয়ীর’ ইতিহাস লেখা হবে। যেখানে একাত্তরের রাজাকার, একাত্তরের নীরব দর্শক আর একাত্তরের কাঁধে চেপে থাকা সুবিধাভোগীরাই হয়ে উঠবে নতুন জাতির ‘নায়ক’। এই পরিকল্পনা কে করছে? কারা এর পেছনে?

এটা কেবল প্রশাসনিক বা আইনি বিষয় নয়। এটা একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক আক্রমণ। মুক্তিযুদ্ধকে খণ্ডিত করতে, তুচ্ছ করতে, প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি-জামাতপন্থী মহলের দীর্ঘদিনের এক স্বপ্ন ছিল। আজ তারা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে, কারণ ইউনুসের এই ভাসমান সরকার—জনবিচ্ছিন্ন, জনসমর্থনহীন এবং বিদেশি সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর সামনে নতজানু এক প্রশাসনিক পুতুল—তাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে।

ইনডেমনিটি কথাটা আগে শুনেছি একবার—যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল স্বৈরশাসক জিয়া। আজ সেই একই কৌশল নতুন চেহারায় ফিরে এসেছে—এইবার মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ বন্ধ করতে। যেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়াটা কোনো অপরাধ। যেন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় আর রাষ্ট্রের গর্ব নয়, বরং একটা নোংরা বিষয়—যা থেকে “মুক্তি” দরকার।

এটা কোনো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ না। এটা সেই ধারাবাহিকতা, যেখানে রাজাকারদের বিচার বন্ধ করা হয়েছিল, যেখানে ঘাতকদের রাজনীতিতে ফেরত আনা হয়েছিল, যেখানে একাত্তরের অপরাধীদের পার্লামেন্টে বসানো হয়েছিল। আর এখন? মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকেই সরিয়ে দেওয়া হবে।

এই পরিকল্পনা শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান নয়—পুরো জাতিকে মাইক লাগয়ে বলা : “তোমাদের ইতিহাস বাতিল।”

এটা ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে চাওয়ার চেষ্টা, যেখানে ইউনুসরা থাকবে, জামাত থাকবে, রাজাকার থাকবে—কিন্তু বঙ্গবন্ধু থাকবেন না, সেক্টর কমান্ডাররা থাকবেন না, শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা থাকবেন না। থাকবে শুধু নিঃস্ব এক জাতি, যার স্মৃতি সম্পূর্ণভাবে মুছে দেওয়া হয়েছে।

ইতিহাসকে হত্যা করার জন্য ইনডেমনিটির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় একটি নির্লজ্জ রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত, যা এখন আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাসে আইপিওশূন্য পুঁজিবাজার

1

বৈষম্যবিরোধীরাই দেখাল, আন্দোলনে রোহিঙ্গা ও বিহারীদের ভূমিকা

2

ইউনুস গংদের দ্বৈত নাগরিকত্বই দ্বিচারিতার মূল কারণ

3

তিন বাহিনীকে নিয়ে জাতির সঙ্গে ইউনুসের প্রেস উইংয়ের মিথ্যাচ

4

জঙ্গি রাষ্ট্রায়নের নেপথ্যে ইউনূস-জিয়া-হাসিনুর ও এনসিপির ভূ

5

ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরকে ঘিরে প্রবাসীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

6

১৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির চিন্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

7

ইউনূসের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ কী নতুন ৭১-এর মুখোমুখি

8

ইউনূস-লামিয়া মোর্শেদ সিন্ডিকেটে ধ্বংসের মুখে দেশের শ্রম বাজা

9

মৌসুমী, ফারিয়া ও সাবিলা নূরসহ ২৫ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

10

ভিত্তিহীন অভিযোগে হয়রানি: ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে টিউলিপের

11

জুলাই আন্দোলন: গুজব, ষড়যন্ত্র আর দেশ বিক্রির কালো গল্প ফাঁস

12

ইউনূসের আমলে সুইস ব্যাংকে রেকর্ড অর্থ জমা, বেড়েছে ৩৩ গুণ

13

অভ্যন্তরীণ ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি ও বৈছাআ থেকে

14

পরিবর্তন হলো মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের শপথ

15

উচ্চ সুদহারে ঝুঁকিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান

16

ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি, নেপথ্যে অর্থনীতিবিদ ইউনূস

17

সিলেটে প্রকাশ্যেই পাথর লুট করছে বিএনপি নেতারা, প্রশাসনের নীর

18

মব উস্কে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের চেষ্টায় ইউনূস গং

19

টাকা পাচারের প্রমাণ চেয়ে ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনার

20