নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীসহ সারাদেশে খুন, ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত এক বছরে সহিংসতা ও অপরাধের হার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০৭ জন এবং মব জাস্টিস বা গণপিটুনিতে ১৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে ৬৬৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুই সাংবাদিককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
জুলাই মাসে পূর্ববর্তী সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যায়। এক বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দেখা যায়নি। অপরাধবিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
মানবাধিকারকর্মী এলিনা খান বলেন, “সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া এই সহিংসতার লাগাম টানা সম্ভব নয়। সব দলকে আলোচনার টেবিলে না আনতে পারলে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে।” তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা ও ধর্ষণের হার গত সরকারের সময়ের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি, যা দেশের বিচারব্যবস্থা ও নাগরিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অপরাধীরা দণ্ডহীনতার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে চাঁদাবাজি, মব জাস্টিস ও রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। সরকারের দৃশ্যমান কোনো রোডম্যাপ না থাকা এবং অপরাধ দমনে সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবে জনগণের মধ্যে ভয়, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বাড়ছে।
মন্তব্য করুন