নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবায় অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপের প্রতিবাদে ব্যবসায়ী সংগঠন পোর্ট ইউজার্স ফোরাম এক সপ্তাহের মধ্যে ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা না করলে বন্দর বন্ধের হুমকি দিয়েছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত প্রতিবাদ সভা থেকে এই হুঁশিয়ারি আসে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, এবং সঞ্চালনা করেন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব। ব্যবসায়ীরা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণ, অথচ নতুন ট্যারিফে বাণিজ্য কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক এম এ সালাম বলেন, “৮৫ শতাংশ আমদানি–রপ্তানি চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সম্পন্ন হয়। অথচ এই সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান লোকসানে নয় বরং কয়েক হাজার কোটি টাকার লাভে রয়েছে। তবুও অযৌক্তিকভাবে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য এক বড় ধাক্কা।”
বিজিএমইএর পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন বলেন, নতুন ট্যারিফে প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, শেষ পর্যন্ত এর বোঝা বহন করবে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে অর্থনীতি আরও সংকটে পড়বে।”
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কিছু ক্ষেত্রে ট্যারিফ ৪৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। “পাইলটিং, পোর্ট ডিউজসহ নানা খাতে অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হচ্ছে, যা শিল্প ও বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারে,” বলেন তিনি।
বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল বলেন, “৫৭ টাকার গেইট পাস ২৩০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রতিটি ট্রিপে আমরা এখন লোকসানে পড়ছি। এর সঙ্গে আয়করের চাপ সব মিলিয়ে আমরা টিকে থাকতে পারছি না।”
এছাড়া প্রাইম মুভার ও ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “১৫ হাজার গাড়ি ও ১০ হাজার শ্রমিক নিয়ে আমরা কাজ করি, কিন্তু বন্দরে কোনো মৌলিক সুযোগ সুবিধা নেই। এখন আবার অতিরিক্ত ফি আরোপ করা হয়েছে, এটা অন্যায়।”
সভায় বক্তারা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ট্যারিফ সংকটে বিশ্ববাজার অস্থির, অথচ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার উল্টোভাবে বন্দরে ট্যারিফ বাড়াচ্ছে। তারা দাবি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হোক।
বাফার পরিচালক অমিয় শঙ্কর বর্মণ বলেন, “বন্দর ও অফডক মিলিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চার্জ ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, টা অসহনীয়।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক, সাইফুল ইসলাম, শাহেদ সরওয়ার, ডব্লিউটিসি সভাপতি মোহাম্মদ শফি, বিপণি বিতান ব্যবসায়ী সমিতির শারুদ নিজাম, ও টায়ার টিউব ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু প্রমুখ।
বক্তারা একমত হন চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ শিডিউল অবিলম্বে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে, নইলে ব্যবসায়ীরা বন্দর বন্ধসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
মন্তব্য করুন