নিজস্ব প্রতিবেদক
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দেশে ভয়াবহভাবে বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, ছিনতাই ও ডাকাতি। নদী থেকে প্রতিনিয়ত লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে, খোদ পুলিশের সদস্যরাও অপরাধীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে সংঘটিত হয়েছে ২ হাজার ৩৬১টি হত্যাকাণ্ড। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন থানায় দায়ের হয়েছে ২ হাজার ৯১১টি মামলা। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে মামলা ছিল ৫৫০টি। অর্থাৎ ইউনূস সরকারের সময় গড়ে প্রতি মাসে আড়াই শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে, প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ জন মানুষ খুন হচ্ছেন।
এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে ৫০টি ডাকাতি এবং ১৬৯টি ছিনতাইয়ের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। আগস্টে এই সংখ্যা ছিল ২৩৮, জুলাইয়ে ২২৫ এবং জুনে ২০০টি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সিআইডির কনস্টেবল রাসেল মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। রামপুরায় বাসে উঠেই এক যাত্রীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে দিবালোকে।
অপরদিকে দেশের নদীগুলোতে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। নৌ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর গড়ে প্রতি মাসে ৪৩টি লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে, যা গত বছরের (৩৬টি) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে উদ্ধার হয়েছে ৩০১টি মরদেহ এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেই ৩৪টি, ঢাকায় ৩২টি।
পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, হত্যার পর প্রমাণ নষ্ট করার জন্যই অপরাধীরা লাশ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। অধিকাংশ লাশের পরিচয় মেলেনি, ফলে মামলাগুলোর তদন্তও জটিল হয়ে পড়ছে। নৌ পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি কুসুম দেওয়ান বলেন, “নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর মধ্যে হত্যা, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনার লাশ থাকে। অনেক সময় লাশ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভেসে যায়, ফলে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।”
তবে সমালোচকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই ভয়াবহ অবনতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসনিক ব্যর্থতারই প্রতিফলন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে, অপরাধ দমন কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
অন্যদিকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে সমন্বয়হীনতা এবং প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংকট, প্রশাসনের অস্থিরতা ও রাজনৈতিক বৈধতার অভাব, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন এক অনিশ্চিত নিরাপত্তা সংকটে দাঁড়িয়ে আছে।
মন্তব্য করুন