নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে উঠে পড়ে লেগেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুগত গোষ্ঠীগুলো। তারা একের পর এক সেনাবাহিনীকে হেয় করে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, জঙ্গিবাদকে আরও পাকাপোক্ত করতেই এই কৌশল হাতে নিয়েছে তারা।
সেনাবাহিনী নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য
বাংলাদেশ বা এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদের একটি বক্তব্য বেশ কিছু আগে ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি সেনানিবাস উড়িয়ে দেওয়ার' হুমকি দিয়েছিলেন। এরপর ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদিও ক্যান্টনমেন্টের ইট খুলে ফেলার হুমকি দেন।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুলাহ সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করেচ বলেছেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনাদের যাদের কাজ ক্যান্টনমেন্টে, আপনারা তারা ক্যান্টনমেন্টেই থাকুন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী সম্প্রতি বাংলাদেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের হেডকোয়ার্টার ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এনসিপির নেতারা যা কিছু বলে তা প্রেসক্রিপশনধর্মী মন্তব্য। বাংলাদেশে পরপর দুটি সামরিক সরকার এবং একটি সেনা-সমর্থিত সরকার ছিল। কিন্তু কখনোই সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি এখনকার মতো এত প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি, কিংবা তাদের এত অসহায় অবস্থায় দেখা যায়নি। একসময় জনগণ সেনাবাহিনীকে জানতো ‘বাঘ’ হিসেবে; এখন দেখে খাঁচার বাঘ হিসাবে—খোঁচাখুঁচি হজম করে যাচ্ছে।
নেপথ্যে কী
সূত্র বলছে, সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে পারলে দেশে জঙ্গিবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যাবে। আর এর পেছনে নীল নকশাকারী দুটি দেশ হলো পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তান চাইছে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশ্রুতি নিতে। তাই দেশটি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে সব রকম চেষ্টাই করে যাচ্ছে। গত মাসেও পাকিস্তান ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শামীন মাহফুজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।
পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী জামাত-উদ-দাওয়া এক শীর্ষ নেতা দাবি করেছেন, বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি ও শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পিছনে ভূমিকা রয়েছে তাদের। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মাদক ও সন্ত্রাস দমনে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেখানে পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাস দমনে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে তারা কীভাবে বাংলাদেশের সন্ত্রাস দূর করবে। তারা বলছেন, এরমধ্যেও রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র।
এদিকে বাংলাদেশের পুরোনো শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের দিক দিয়েও হিসাব স্পষ্ট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো এ দেশেও তারা আরব বসন্তের মতো ঘটনা ঘটাতে পেরেছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে তারা এদেশে প্রাকৃতিক সম্পদসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি একটি নীলনকশার অংশ হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের আধিপত্য বিস্তার। মিয়ানমারে চীন-সমর্থিত গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান নিতে সক্রিয় হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট, মানবিক করিডোর, এবং চট্টগ্রাম বন্দর—সব মিলে এই অঞ্চলটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে একটি “খ্রিস্টান রাজ্য” গঠনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে, যা পূর্ব তিমুরের ঘটনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও সতর্ক করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বাংলাদেশে একটি এয়ার বেজ স্থাপনের মাধ্যমেও এসেছে।
একাধিক সূত্র ও বিশ্লেষকের মতে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই ষড়যন্ত্রে “প্রক্সি নেতা” হিসেবে ব্যবহার করছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের দাবি, তাঁকে জাতিসংঘ মহাসচিব করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সহায়তা, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে বাধা এবং বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ যেন অন্য কোনো শক্তির হাতিয়ার হয়ে না পড়ে—সেই বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন