নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের কাশিমপুর কারাগারে রাজনৈতিক বন্দিদের খাবারে বিষ মেশানোর ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। বন্দি ও তাদের পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে খাবারের সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ধীরে ধীরে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। তারা মনে করছেন, এটি কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং ভিন্নমত দমনের একটি সুপরিকল্পিত কৌশল।
পরিবারগুলোর অভিযোগ, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বহু রাজনৈতিক বন্দি হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কারও দেহে মারাত্মক দুর্বলতা, কারও ত্বকে অজানা চর্মরোগ, আবার কারও মধ্যে মানসিক অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই পরিবর্তনগুলো কোনো প্রাকৃতিক কারণ নয়, বরং কারাগারের খাবারে বিষ মেশানোর ফল। কয়েকজন বন্দি জানিয়েছেন, খাবারের গন্ধ ও স্বাদে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, কিন্তু অভিযোগ করার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এটি নতুন ধরনের ‘নীরব নিপীড়ন’। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ও সচেতন মানুষদের ভেঙে দেওয়ার জন্য তাদের শরীর ও মনকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। অনেক বন্দি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হলেও তাদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে অনেকের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশব্যাপী এক গভীর মানবাধিকার সংকট হিসেবে দেখছে। তারা বলছে, কারাগার কখনোই রাজনৈতিক প্রতিশোধের হাতিয়ার হতে পারে না। এই অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করতে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং কারাগারের ভেতরে স্বচ্ছ নজরদারি ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়েছে।
তারা আরও বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ভিন্নমত দমনের যে প্রবণতা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য একটি ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত। দেশের নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এখনই এই বিষয়ে সরব হওয়া, যাতে কোনো নাগরিক আর কখনো তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে এমন নির্যাতনের শিকার না হয়।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভিত্তি রক্ষায় কাশিমপুরের এই অভিযোগের সঠিক তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
মন্তব্য করুন